Sunday 3 March 2013

জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে সারা দেশে শিশু-মহিলাসহ নিহত ২২ সাতক্ষীরায় জামাত-শিবিরের মহত্ব, বিজিবির বিশ্বাস ঘাতকতা


বাংলাদেশ নিউজ২৪ : ০৩/০৩/২০১৩

http://www.nowbd.com/2013/03/03/147607.htm

ঢাকা: জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতাল চলাকালে রোববার ছয় জেলায় জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। বগুড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই প্লাটুন সেনা সদস্য নামানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হযেছে।

এর মধ্যে বগুড়ায় ৯, রাজশাহীতে ৪, জয়পুরহাটে ৫, ঝিনাইদহে ১, সাতক্ষীরায় ২ ও গাজীপুরে একজন নিহত হয়েছেন।

বগুড়া
বগুড়ায় রোববার ভোর ৪টা থেকে হরতাল সমর্থক এবং সাঈদী ভক্ত হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষের গণবিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশের গুলিতে নারীসহ নয় জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। এখন পর্যন্ত বগুড়ার পাঁচটি থানা ঘেরাও করে রেখেছে হাজার হাজার নারী পুরুষ। সাতটি পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করেছে।

বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনে আগুন লাগিয়ে রেললাইন উপড়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধরা। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বগুড়া শহর এবং চারপাশের এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক সারোয়ার মাহমুদ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।

পুলিশের গুলিতে নিহতরা হলেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের মিরাজ আলীর স্ত্রী রেজিনা বেগম (৪৫), ডোমন পুকুর মন্ডল পাড়ার তোতা মিয়ার স্ত্রী মুনজিলা খাতুন (৩৮), একই গ্রামের রকিবের ছেলে আব্দুর রহমান (৬০), মুরাদপুরের দুলু মিয়া (৩৫), পার আচলে গ্রামের জিয়াউর রহমান (৩৯), বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায় মাঝিড়া গ্রামের বাবু মিয়া, বগুড়া সদর উপজেলার আলমগীর হোসেন, টিটু মিয়া ও অজ্ঞাত একজন।

আহতদের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের আত্মীয়-স্বজনরা বলছেন, পুলিশ এসে আহতদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে এবং গুলিবিদ্ধদের হাসপাতালে ভর্তি হতে দিচ্ছে না।

এদিকে বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ি, নারুলী, স্টেডিয়াম, মোকামতলা, ফুলবাড়ি, বনানী এবং কইগাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

এছাড়াও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজউদ্দীন, সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে। বগুড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অগ্নিসংযোগ করেছে জনতা। বগুড়ার গাবতলীতে কয়েক হাজার লোক ‘সাঈদী মুক্তি মঞ্চ’ তৈরি করে অবিরাম বিক্ষোভ চলছে।

অপরদিকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া, সোনাতলা উপজেলা পরিষদে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধরা। নন্দীগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। জেলার ১২টি উপজেলায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে সড়ক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। গোটা বগুড়া জেলা গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে।

রাজশাহী
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে চার জন নিহত হয়েছেন। রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে। রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) তওফিক মাহবুব চৌধুরী নতুন বার্তাকে চার জনের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সময় আরো পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

নিহত দুজন হলেন জামায়াতকর্মী মুজাহিদ (৫০) ও রফিকুল (১২)। বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি।

জয়পুরহাট
রোববার জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে জামায়াতের ডাকা হরতালে সংঘর্ষে বিজিবি ও পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো ২০ জন।।

নিহতরা হলেন- কুসুম্বা ইউনিয়নের বাঁশখুর গ্রামের আজিবর (২৫), নাসির (২০), কাঁশড়া গ্রামের মজিদুল (৪০), ভিগার গুচ্ছ গ্রামের আব্দুল হাকিম (২০) ও ধরঞ্জী ইউনিয়নের দৈবনকনন্দপুর গ্রামের হেসাব আলী (৫০)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন সশস্ত্র অবস্থায় হরতালবিরোধী মিছিল থেকে দৈনিক সংগ্রামের প্রতিনিধি জামায়াত কর্মী আবু হাসান ও মুক্ত সকালের প্রতিনিধি জামায়াত কর্মী আমিনুল ইসলাম দুলালের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।

খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ পাঁচবিবিতে আসে।

এ সময় তারা কুসুম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস ও নেতা কর্মীদের বাড়ি-ঘর দোকানপাট, পৌর পার্ক, মুক্তিযুদ্ধ সংসদ ভাঙচুর করে। মিছিলটি পাঁচবিবি শহর প্রদক্ষিণ করে থানার সামনে এলে পুলিশ ও বিজিবি গুলি চালালে জামায়াত-শিবিরের পাঁচকর্মী নিহত ও ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ও জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের হরিণাকু-তে হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিন শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন আরো ২০ জন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, হরতাল সমর্থনকারীরা বোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ভাঙচুর করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও হরতাল সমথকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে তিন শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ওমর ফারুক (৪০) নামে এক পুলিশ নিহত ও পাঁচ পুলিশসহ আরো অন্তত ২০ হরতাল সমর্থক আহত হয়।

এদিকে সকাল থেকে কালীগঞ্জ এবং ঢাকা-বিষয়খালী মহাসড়কে ও চুয়াডাঙ্গা সড়ক, মহেশপুর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা তিনটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করেছে। এদিকে সাঈদীর মুক্তির দাবিতে বিষয়খালী অঞ্চলের হাজার হাজার নারী রাস্তা অবরোধ করে এবং ঝাড়ু মিছিল বের করে। এরপর বিষয়খালী শহীদ মোস্তফা কলেজ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

এদিকে কালীগঞ্জ থেকে পিকেটার ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কমপক্ষে ১০ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এদিকে পুলিশের লাটিচার্জে সাংবাদিক ওলিয়ার রহমানসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।

সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় বিজিবির গুলিতে দু’জন নিহত ও দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার রইচপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- রইচপুর গ্রামের মফিজউদ্দিনের ছেলে জামায়াত কর্মী মাহবুবুর রহমান (৪২) ও একই গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে রইচপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সোহাগ (১২)। গুলিবিদ্ধরা হলেন- ইব্রাহিম হাজীর ছেলে মোহাম্মদ ইছাহাক (৩২) ও নূরুল আমিনের ছেলে নাজির হোসেন ওরফে বাচা (২২)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পৌরসভায় ১৪৪ ধারা জারি থাকায় জামায়াত শিবিরকর্মীরা সকাল থেকেই শহরের সব প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখে। কোথাও গাছ ফেলে টায়ার জ্বালিয়ে আবার কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে হরতালের পক্ষে তারা মিছিল করতে থাকে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিজিবির একটি টহল দল রইচপুরে মোড়ে পৌঁছালে তাদের গাড়ি আটকে দেয় অবরোধকারীরা। এ সময় বিজিবি সদস্যরা কাকুতি-মিনতি করে অবরোধকারীদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে চলে যাওয়ার সময় এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে জামায়াতকর্মী মাহবুবুর রহমান ও সোহাগ ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এ ঘটনায় অবরোধকারীদের সঙ্গে এলাকার শত শত পুরুষ ও মহিলা যোগ দেয়। খবর পেয়ে র‌্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

গাজীপুর
গাজীপুরে পিকেটিংকালে ছাত্রশিবিরের শ্রীপুর উপজেলা সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাংলা তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামের ছমির উদ্দিন সরকারের ছেলে।

জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রোববার ফজরের নামাজের পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার জৈনাবাজার এলাকায় পিকেটিং করছিলেন।

এ সময় ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী একটি ট্রাক চাপা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। মাওনার একটি স্থানীয় ক্লিনিকে নেয়া হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আব্দুর রাজ্জাকের লাশ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।